ITALIK অনিকেত শামীম সম্পাদিত ‘তারুণ্যের স্পর্ধিত উচ্চারণ’ (বঙ্গবন্ধুর ১০৪ তম জন্মদিন উপলক্ষে ১০৪ তরুণ কবির কবিতা) সংকলিত গ্রন্থে ‘পোয়েট অব বঙ্গবন্ধু’ খ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণের ভূমিকা…
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বর্তমান প্রজন্মের তরুণ কবিদের মস্তিষ্কে, তাদের চিন্তায়, অনুভবে ও আত্মস্থতার জায়গাটিতে একটি অমোচনীয় অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন, এটা আমাদের জন্য বড়ো আনন্দের, বড়ো উদ্যাপনের বিষয় বৈকি। আমি তো এমন বাংলাদেশই চেয়েছিলাম, যেখানে বঙ্গবন্ধুর মা-মাটি ও মানুষের রাজনীতি, তাঁর জনবান্ধব নীতি-আদর্শ, তাঁর বাস্তবোচিত প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতাপূর্ণ উন্নয়নমূলক কর্মপন্থাগুলো সর্বাগ্রে অনুসৃত হবে।
অন্যদিকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে, আমাদের মহান অর্জন স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে, এদেশের গণমানুষের স্বপ্ন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এখনো স্বাধীনতা-বিরোধী কুচক্রীমহলের নানা ষড়যন্ত্র, কুৎসিত কারসাজি ও বিবিধ অপচেষ্টার কমতি নেই। এ সকল অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ এদেশের গণমানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন এবং জনগণের আস্থা-ভোটে বারবার নির্বাচিত হয়ে তিনি তার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের নবপ্রজন্মের কবিগণও তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এই কাব্যসংকলনটি আমাদের সে কথাই বলে।
কবিরা একটি জাতির প্রথম স্বাপ্নিক ও দ্রষ্টা। তাদের স্বপ্নচারী-দ্রষ্টব্যগুলো প্রায়শই নিভুর্ল ও অনাবিল হয়। তাদেরই ধারণে লালনে চর্যায় জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়। বক্ষ্যমাণ ‘তারুণ্যের স্পর্ধিত উচ্চারণ’ শীর্ষক কাব্য-সংকলনটি বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মদিনে ১০৪ জন তরুণ কবির কবিতা নিয়ে সংকলিত হয়েছে। এখানে সবাই তরুণ কবি, যাদের অধিকাংশই আমার স্নেহধন্য ও আশীর্বাদপুষ্ট। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারা তাদের হৃদয়ভেদ্য পঙক্তিমালা সাজিয়েছেন, এ আমার জন্য অবশ্যই একটি গৌরবের ও শ্লাঘার ব্যাপার বৈকি। তাদের জ্ঞাতার্থে এখানে আমি একটি কথা বলে রাখি, আমিই বোধহয় একমাত্র বাঙালি কবি, যে কিনা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সর্বাধিক সংখ্যক উৎকৃষ্ট কবিতা লিখেছি। সুতরাং তোমরা আমাকে ছাপিয়ে যাবার বৃথা চেষ্টাটি করো না। হাহা! আর যদি কোনো তরুণ কবি আমাকে ছাপিয়ে যায়ও, তা হবে আমার জন্য আনন্দের এবং বাংলা কবিতার জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
আমি আনন্দিত যে, বাঙালির বাঁচার দাবি ছয় দফা কর্মসূচি প্রদান করার পর বঙ্গবন্ধুকে যখন কারারুদ্ধ করা হয়, তখন আমি ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের ছাত্র ছিলাম। তরুণ কবি আমি। বিএসসি পড়তাম। কবিতা লিখব, এমনটি তখনও ভাবিনি। একটা দোটানার মধ্যে ছিলাম। আমাকে কবিতার দিকে টেনে নিলেন বঙ্গবন্ধু। শেখ মুজিবকে নিয়ে তখনই আমি একটি কবিতা লিখেছিলাম। কবিতাটি তৎকালীন দৈনিক সংবাদ-এ প্রকাশিত হয় [১২ নভেম্বর ১৯৬৭]। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের সমর্থনে আমি তখন আরও অনেক কবিতা লিখেছি। প্রকৃত প্রস্তাবে মধ্য ষাটের পর, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছত্রছায়াতেই আমার কাব্যযাত্রা শুরু হয়েছিল। আমি খুশি যে, যাঁকে নিয়ে একসময় লক্ষ-লক্ষ কবিতা রচিত হবে, তাঁকে নিয়ে প্রথম কবিতাটি আমিই লিখেছিলাম।
কবি ও সম্পাদক অনিকেত শামীম এ সংকলনটির সম্পাদনায় কুশলী কারিগর হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। কারণ, যতদূর জানি- বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু সেই সমস্ত সংকলনে তরুণদের কবিতা খুব কমই চোখে পড়ে। এক্ষেত্রে অনিকেত শামীম একজন অব্যর্থ কুশলী যুধিষ্ঠির। কবিতাযজ্ঞে, সাহিত্যপরিক্রমায় ও সাংস্কৃতিক-সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে নিরন্তর নিয়োজিত থাকার জন্য আমি কবি অনিকেত শামীমকে অভিনন্দন জানাই, তাঁর জন্য মঙ্গল কামনা করি। এই মূল্যবান সংকলনটি সম্পাদনা করে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও বেশি, আরও উন্নতমানের কবিতা লেখা হোক- ভাবিকালের কবিদের কাছে এটিই আমার প্রত্যাশা।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
১৪ মার্চ ২০২৪
নয়াগাঁও, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।