বঙ্গদর্পণ : বাঙালির সহস্রাব্দ-সন্ধানী আলেখ্য | অনিকেত শামীম

বেবিলোন কোথা হারায়ে গিয়েছে, মিশর-অসুর কুয়াশাকালো;
চাঁদ জেগে আছে আজো অপলক, –মেঘের পালকে ঢালিছে আলো!
সে যে জানে কত পাথরের কথা, –কত ভাঙা হাট মাঠের স্মৃতি!
কত যুগ কত যুগান্তরের সে ছিল জ্যোৎস্না, শুক্লা তিথি!
[চাঁদনীতে, ঝরা পালক : জীবনানন্দ দাশ]

প্রকৃতির দুর্বিপাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতার লুপ্ত-ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার আমরা। বেবিলোনীয় সভ্যতা, হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো সভ্যতা আজ আমাদের কাছে ইতিহাস। একেকটি সভ্যতার ইতিহাস হাজার হাজার বছরের। সভ্যতার ইতিহাস ভাঙাগড়ার খেলা খেলে গড়ে ওঠে। উপরের পঙক্তিতে জীবনানন্দ চাঁদকে কালের কিংবা যুগযুগান্তরের ইতিহাসের সাক্ষ্য মেনে জানান দিচ্ছেন বেবিলোনীয় কিংবা মিশরীয় সভ্যতার হারিয়ে যাওয়ার কথা। কত পাথর, ভাঙা হাট, মাঠের স্মৃতি বুকে ধারণ করে জেগে আছে চাঁদ। চাঁদ এখানে সময় কিংবা ইতিহাসের প্রতীক। মানুষের রক্ত ঘাম ও শ্রমে একেকটি সভ্যতা গড়ে ওঠে। হাজার বছর ধরে পথ হাঁটার ক্লান্তিতে সভ্যতা নুয়ে পড়ে, বিলুপ্ত হয়। গড়ে ওঠে নতুন সভ্যতা। সভ্যতা ধারণ করে ইতিহাসকে। মাঝে মাঝে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় ইতিহাসকে। তখন কে দেবে সাক্ষী, কী দেবে সাক্ষ্য? আজকের পৃথিবীতে যেখানে যুগের অবসান না হতেই ইতিহাসের বিকৃতি ঘটে, সেখানে শত কিংবা হাজার বছরের ব্যবধানে নানা মুনি নানা মতে কিংবা স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে থাকে। ইতিহাস হচ্ছে কালের সাক্ষী, যা জেগে থাকে অপলক। সুতরাং একে খুব যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ প্রয়োজন। সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, একটি জাতিগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে কিন্তু সেই সভ্যতা কিংবা জাতিগোষ্ঠীর বেড়ে ওঠা, তার ইতিহাস-ঐতিহ্য পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করে রেখে যাওয়া মহৎ কর্মকাণ্ডের বহিঃপ্রকাশ।

এ রকম একটি মহৎ কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের থার্ড মিলেনিয়াম কমিটি ফর সোশ্যাল ট্রানজিশন, বাংলায় যার নামকরণ করা হয়েছে সমাজ-রূপান্তর সন্ধানী তৃতীয় সহস্রাব্দ সমিতি। এ সংগঠনটির সঙ্গে আমার পরিচয়ও সেই জীবনানন্দ’র সূত্রে। ১৯৯৯ সালে জীবনানন্দ দাশ-এর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে কলকাতার বিরাটিতে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হই। সেখানে পরিচয় হয় অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা, কবি ও সম্পাদক মানসী কীর্তনীয়ার সঙ্গে। তিনি সমাজ-রূপান্তর সন্ধানী তৃতীয় সহস্রাব্দ সমিতির অফিস সম্পাদক। সেই সূত্র ধরেই এই সংগঠনের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা। সেখানে বাংলাদেশের সমন্বয়কারী প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে মনোনীত করা হয়।


বাঙালি জাতি তার উত্থানকাল থেকে অতিক্রম করেছে একটি সহস্রাব্দ। অর্থাৎ পণ্ডিতদের গবেষণা অনুযায়ী একাদশ শতাব্দী থেকেই এ জাতির উত্থানকাল ধরা হয়। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে যে, বঙ্গীয় জনগোষ্ঠী বা বঙ্গভূমির পৃথক পরিচয় অনেক আগে থেকেই। সেই বিতর্কে না যেয়ে বাংলার ইতিহাস-অন্বেষণে সাহিত্যের দ্বারস্থ হয়ে আমরা চর্যার কালকেই বাঙালির উত্থানপর্ব ধরলে মূলত দ্বিতীয় সহস্রাব্দব্যাপী তার ব্যাপ্তি অর্থাৎ দ্বিতীয় সহস্রাব্দেই বাঙালিত্ব স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট, অন্যদের চেয়ে পৃথক মাত্রা পেয়েছে বলা যায়।
বাংলা ও বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস সংরক্ষণ মিলেনিয়াম কমিটির মূল উদ্দেশ্য। এবং এই সংরক্ষণ করা হচ্ছে দুটি মাধ্যমে। একটি হচ্ছে প্রিন্টেড ম্যাটার, যা আকর গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে ১০ খণ্ডে এবং অন্যটি হচ্ছে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে টাইম ক্যাপসুল বা কালাধার নির্মাণ। দশ খণ্ডে যে আকরগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে, তার নাম রাখা হয়েছে ‘বঙ্গদর্পণ’। ইতোমধ্যে এর দুটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।

প্রথম দুটি খণ্ডে প্রয়াত বাঙালি মনীষীদের চিন্তামূলক লেখা স্থান পেয়েছে। যাদের লেখা স্থান পেয়েছে সূচিক্রম অনুযায়ী তারা হলেন– ১ম খণ্ড : সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, অতুল সুর, সুবোধ ঘোষ, নীহাররঞ্জন রায়, প্রবোধচন্দ্র বাগচি, সুকুমার সেন, বিনয় ঘোষ, কপিল ভট্টাচার্য, ড. দীনেশচন্দ্র সরকার, অনুকূলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, শশিভূষণ দাশগুপ্ত, পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়, হিতেশরঞ্জন সান্যাল, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, রমেশচন্দ্র মজুমদার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আহমদ শরীফ, কাজী আবদুল ওদুদ, যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, সৈয়দ মুজতবা আলী, রেজাউল করিম, রামমোহন রায়, নীরদচন্দ্র চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৈয়দ শাহেদুল্লাহ, গোপাল হালদার, রাজনারায়ণ বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, নির্মল কুমার বসু, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, আবুল ফজল, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দ, চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বিনয় সরকার, রাধারমণ মিত্র, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। প্রথম খণ্ডে ৪২ জন লেখকের ৪৭টি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। অথচ আহ্বায়ক-সম্পাদক শ্রী বিশ্বজীবন মজুমদার ২য় খণ্ডের প্রাককথনে বলেছেন- প্রথম খণ্ডে ৪৫ জন লেখকের ৪৮টি প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। শ্রী বিশ্বজীবন মজুমদারের মতো অনুসন্ধিৎসু গবেষকের পক্ষে এ রকম তথ্যবিভ্রাট কীভাবে হলো? প্রথম খণ্ডে ৪২ জন লেখক সূচিবদ্ধ হলেও লেখক পরিচিতি দেয়া হয়েছে ৪১ জনের।

২য় খণ্ডের লেখকসূচিতে আছেন : প্রবোধচন্দ্র বাগচি, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, মেঘনাদ সাহা, নীহাররঞ্জন রায়, অন্নদাশঙ্কর রায়, কৈলাসচন্দ্র সিংহ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, গোপাল হালদার, আহমদ ছফা, নারায়ণ চৌধুরী, মুহম্মদ এনামুল হক, মুজফ্ফর আহমদ, বিনয় চৌধুরী, রমেশচন্দ্র দত্ত, হরেকৃষ্ণ কোঙার, ভবানী সেন, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, শখারাম গণেশ দেউসকর, অতুলচন্দ্র গুপ্ত, বিনয় ঘোষ, কাজী আবদুল ওদুদ, যোগেশচন্দ্র বাগল, জগদীশচন্দ্র বসু, সুভাষচন্দ্র বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, এস. ওয়াজেদ আলী, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিমলচন্দ্র সিংহ, শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজনবিহারী ভট্টাচার্য, নেপাল মজুমদার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, নীরেন্দ্রনাথ রায়, প্রমথ চৌধুরী, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, মুহম্মদ আবদুল হাই, বুদ্ধদেব বসু, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ধূর্জটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বেগম রোকেয়া, সরলাবালা সরকার, শরৎকুমারী চৌধুরানী। ২য় খণ্ডে ৪৪ জন লেখকের ৪৫টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে।

১ম খণ্ডের পূর্বলিপিতে সমিতির সভাপতি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মাননীয় স্পিকার (অধ্যক্ষ) শ্রী হাসিম আবদুল হালিম জানান, বাঙালি তার জাতিসত্তার গৌরবে প্রাণবন্ত। অথচ জাতিদাম্ভিকতা তার মধ্যে বাসা বাঁধেনি বলেই সে দিয়েছে এবং নিয়েছে। বহতা নদীর মতো বাংলা ও বাঙালি বিকশিত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আমাদের বর্তমান পরিকল্পনা দুটি। প্রথমত অবিভক্ত বাংলার হাজার বছরের পটভূমিতে তার সমাজ ইতিহাস ভাষা সংস্কৃতিচর্চা জীবনসংগ্রাম ও আন্দোলন বিজ্ঞানমনস্কতা দেশভাগ ভাষা-আন্দোলনসহ জীবনের সামগ্রিক ইতিবৃত্তকে আগামী প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ করা। আমাদের বিচারে উপযুক্ত সম্পাদকম-লীকে তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

২য় খণ্ডে সমিতির সভাপতি জানান, প্রথম তিনটি পর্বে প্রয়াত মনীষীদের মূল্যবান প্রবন্ধ থাকছে। ৪র্থ খণ্ড থেকে থাকবে বিদ্বান ব্যক্তিদের রচিত সামগ্রিক বিষয় নিয়ে রচনাসম্ভার। আমাদের দ্বিতীয় প্রকল্প হলো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বঙ্গভাষী ভূখণ্ডের অতীত ও বর্তমানের সমাজদর্পণের নির্দেশনাগুলো একহাজার বছর ধরে রক্ষার জন্য একটি কালাধার নির্মাণ করা। এ সম্পর্কে গবেষণা প্রায় শেষ পর্যায়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কালাধার প্রকল্পের সভাপতি, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, রাজ্য প্রতœতত্ত্ব অধিকার, পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘ এই প্রকল্পের কাজে যোগদান করেছেন।’

আকর গ্রন্থের প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক পবিত্র সরকার তার ভূমিকায় বিশ্লেষণধর্মী এবং গবেষণালব্ধ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ১৯১৩-তে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার পাওয়া বাঙালির সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণের এক শীর্ষস্থানীয় ঘটনা, পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি পথের পাঁচালী ও অপরাজিত চলচ্চিত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্মানলাভও তাই। এছাড়া সুভাষচন্দ্র বসুর সামরিকতা ও কূটনীতি নির্ভর স্বতন্ত্র এক স্বাধীনতার সংগ্রাম, পশ্চিমবাংলায় বামপনি’ রাজনীতির ক্রমশ শক্তি-অর্জন ও দীর্ঘস্থায়ী প্রশাসন-প্রতিষ্ঠা এবং বাংলাদেশের রক্তাপ্লুত আবির্ভাব বাঙালি ও বঙ্গভাষী ভূখণ্ডকে পৃথিবীর মনোযোগের বৃত্তে নিয়ে আসে।
বঙ্গদর্পণের আহ্বায়ক-সম্পাদক প্রাককথনে বলেছেন, রচনা সংগৃহীত করার সময় আমরা দুটি বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিয়েছি। এক, উৎসাহী পাঠকের কথা ভেবেই এই সংকলন। পাণ্ডিত্যভারে ভারাক্রান্ত রচনা আমরা যথাসাধ্য পরিহার করতে চেষ্টা করেছি। দুই, রচনা বৃহত্তর বঙ্গভূমি ও তার জনমানসের পরিচয়বাহী কি না সে-বিষয়ে সতর্ক থেকেছি।

১ম খণ্ডে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রী ধ্রুব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমরা জেনে নিতে চাই এই বাংলার ভূখণ্ডে আমাদের ইতিহাসটা কী। …আমাদের মিলেনিয়াম কমিটি তাই বাংলার মাটিকে ছুঁয়ে তার ভাষা ও জাতিসত্তাকে ছুঁয়ে তার রূপগুলিকে স্পষ্ট করে দেখে নিতে চায়। এই বাংলা বিশাল বিশাল উত্তরণের মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে। জানতে চায় তার আত্মপরিচয়। এখানে পশ্চিমবাংলা আছে, বাংলাদেশ আছে, ত্রিপুরা আছে, অন্যান্য রাজ্যের কিছু কিছু বঙ্গভাষী এলাকা আছে, প্রবাসী বাঙালিরা আছে। এরা সবাই সংখ্যায় প্রায় ২২ কোটি। কিন্তু নিবন্ধকার হিসেবে বঙ্গবাসী এবং বঙ্গভাষী মিলিয়ে এই সংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি হবে বলে মনে করি।

বঙ্গদর্পণ-এর প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা পণ্ডিত-বুদ্ধিজীবী, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র সরকার। সম্পাদকমণ্ডলির সদস্যরা হচ্ছেন অধ্যাপক অমলেন্দু দে, শ্রী সনৎকুমার চট্টোপাধ্যায়, অধ্যাপক রাধারমণ চক্রবর্তী, অধ্যাপক অশোকনাথ বসু, অধ্যাপিকা মালিনী ভট্টাচার্য, অধ্যাপক অজিত দত্ত। আহ্বায়ক সম্পাদক হিসেবে আছেন অধ্যাপক বিশ্বজীবন মজুমদার।

বঙ্গদর্পণ শিরোনামে ১০ খণ্ডে প্রকাশিতব্য এই আকর গ্রন্থে বঙ্গভাষী ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর একহাজার বছর উত্তীর্ণ হওয়ার ঘটনাটিকে যথাযোগ্যভাবে চিহ্নিত করার জন্য যে মহাপরিকল্পনা মিলেনিয়াম কমিটি গ্রহণ করেছে, তাতে কী কী অন্তর্ভুক্ত থাকবে তার একটি খসড়া তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো:
বঙ্গভাষী ক্ষেত্রের ভূগোল- মৃত্তিকাভিত্তি ও প্রাকৃতিক বিন্যাস; নদনদী; পর্বত ও অরণ্যক্ষেত্র; কৃষি কর্ম ও খাদ্যাভ্যাস, খাদ্য উৎপাদন; বাঙালির নৌবিদ্যা; বাংলার পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি, প্রাণিসম্পদ ও তার বিকাশ; নৃবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বঙ্গভাষীদের জাতিবৈশিষ্ট্য ও তার বিবর্তন, ধর্মীয় বিন্যাস-প্রধান ও অপ্রধান ধর্ম; বঙ্গভাষী নারী-সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র আখ্যান; বঙ্গভাষী অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী- তাঁদের গোষ্ঠীগত বিন্যাস ও জীবনাচরণ, তাঁদের সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য দান; বাঙালির আত্মবোধ-তার সম্ভাবনা, শক্তি ও সমস্যা; বাঙালির সাধারণ ইতিহাস, ভূমি সংস্কার; মৎস্যপ্রিয়তা ও মৎস্যজীবিতা।

বাংলা ভাষা, মান্য চলিতের রূপ, আঞ্চলিক ও শ্রেণি-উপভাষা গদ্যভাষা ও কাব্যভাষার বিবর্তন; বাংলার লোকসাহিত্য; বাংলার নগরনিবদ্ধ সাহিত্য, বাঙালির নাগরিক শিল্পকলা; বাঙালির গৃহনির্মাণ শিল্প ও মন্দিরস্থাপত্য, বাঙালির উদ্যান-কলা; লোকনৃত্য ও নাগরিক নৃত্য; বাঙালির আবৃত্তিচর্চা, বাঙালির নাট্যকলা—বাঙালির সাংবাদিকতা—বাঙালির চলচ্চিত্রকর্ম; বাঙালির ধর্ম ও দর্শনচিন্তা।

বঙ্গভাষী ভূখণ্ডের শিক্ষার অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ, নিম্ন-মধ্য-উচ্চশিক্ষা– পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ; বাঙালির চিকিৎসাচর্চা ও আধুনিক ভেষজশিল্প; স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ; বাঙালির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসাধনা; কৃষি অর্থনীতি; সমবায় আন্দোলন; সমাজ কল্যাণ; কৃষি উৎপাদন; সর্ব ভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালির রাজনৈতিক চিন্তা ও আন্দোলন; বিপ্লবসাধনা, সুভাষচন্দ্র, বামপন্থি রাজনীতি; বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বিবর্তন; ১৯৪৭-এর পরবর্তী পশ্চিমবাংলায় বিভিন্ন প্রশাসন; ছাত্র-আন্দোলন; কৃষক আন্দোলন।

কলকাতা ও অন্যান্য নগর-পরিচয়; সুন্দরবন, অরণ্যবিন্যাস ও উন্নয়ন, বঙ্গভাষী অঞ্চলের পথঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা; যানবাহন; গত পাঁচ দশকে গ্রামজীবনের রূপান্তর; আবাসন; ফুল-ফল-বাগিচা; বাঙালির খাদ্যপ্রস্তুত ও পরিবেশন-প্রণালী; বাঙালির পোশাক-পরিচ্ছদ ও প্রসাধন; বাঙালির খেলাধুলা; পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা; পশ্চিমবাংলায় নতুন শিল্পোদ্যোগ; সেচ, জলপথ; গ্রামোন্নয়ন; ত্রাণ-ব্যবস্থা; বঙ্গভাষী অঞ্চলের নানা রাজনৈতিক দল; নানা ক্ষেত্রে বেসরকারি সেবা-উদ্যোগ (এনজিও); বহির্বঙ্গে ও বহির্ভারতে বাঙালি; বঙ্গভাষী ও বাঙালিকেন্দ্রিক নানা সাম্প্রতিক আন্দোলন; বিচ্ছিন্নতামুখী আন্দোলন; বাঙালির ভ্রমণচর্চা; বাংলার পরিবার-সংগঠন ও তার বিবর্তন; বাংলার প্রশাসনিক ব্যবস্থা; আইন-আদালত ও শাস্তিদান প্রথা; সংসদীয় ব্যবস্থা; কারাগার ও আরক্ষা-ব্যবস্থা; অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা; প্রথাবহির্ভূত শক্তির গবেষণা ও প্রয়োগ; বিদ্যুৎ ব্যবস্থা; তথ্যপ্রযুক্তি; বাংলাভাষী অঞ্চলের গ্রন্থাগার; কিছু বিশ্বখ্যাত বাঙালি ইত্যাদি।


উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো অনেক ব্যাপক এবং বিস্তৃত সন্দেহ নেই। মিলেনিয়াম কমিটির কয়েকটি সভায় (প্রথম খণ্ড বের হওয়ার আগে ও পরে) উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার মাননীয় স্পিকার হাসিম আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি সভায় আমি বলেছিলাম– অনুসন্ধিৎসু পাঠক যদি প্রশ্ন করেন– মন্দির স্থাপত্য আছে অথচ মসজিদ স্থাপত্য নেই কেন? তাছাড়া ইতিহাসের কিছু বিষয় যেমন : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতীয় উপমহাদেশে আগমন, সিপাহি বিদ্রোহ, পলাশির যুদ্ধ, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, সাতচল্লিশের দেশভাগ ইত্যাদি আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। মিলেনিয়াম কমিটিকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে যদি বিংশ শতাব্দীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বাহান্নর ভাষা আন্দোলন অনুপস্থিত থাকে। আমাদের ছিদ্রান্বেষী স্বভাবই হচ্ছে নিজে কিছু করব না কিন্তু অন্যের ত্রুটি ধরতে আপত্তি কোথায়! সুতরাং মিলেনিয়াম কমিটি যেহেতু দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তাই তাদেরকে আরও সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে। অবশ্য প্রধান সম্পাদক তাঁর ভূমিকায় বলেছেন যে, এই তালিকাতেও কোনও কোনও জরুরি প্রসঙ্গ আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে এমন হতেই পারে। সেক্ষেত্রে আমরা পাঠকের কাছে সে-বিষয়ে অবহিত করতে সবিনয়ে অনুরোধ করব, তাদের যোগদানে আমাদের কাজ সমৃদ্ধ হবে।

মিলেনিয়াম কমিটি বলেছেন বঙ্গদর্পণ দশটি খণ্ডে প্রকাশিত হবে। কিন্তু উপরে যে-খসড়া তালিকার বিস্তৃত বিষয়াবলি উল্লেখ করা হয়েছে, এসব বিষয় যদি পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিফলন করতে হয়, তাহলে বঙ্গদর্পণের পরিধি নিয়ে মিলেনিয়াম কমিটিকে নতুনভাবে ভাবতে হবে। দশ খণ্ডে এত ব্যাপক বিষয় সংকুলান করতে যেয়ে ইতিহাস বা তথ্য খণ্ডিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই মিলেনিয়াম কমিটির নতুন করে ভাবনার অবকাশ আছে যে, খণ্ড সংখ্যা দশেই সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি তা আরও বাড়ানো হবে।


থার্ড মিলেনিয়াম কমিটি ফর সোশ্যাল ট্রানজিশন বা সমাজ-রূপান্তর সন্ধানী তৃতীয় সহস্রাব্দ সমিতি ১৯৯৯ সালের জুলাই মাসে কলকাতার সেরা বিদ্বান ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এরকম একটি মহাপরিকল্পনার জন্য প্রয়োজন প্রগতিশীল চিন্তাচেতনায় উদ্বুদ্ধ দেশ ও জাতির প্রতি অনুরাগী অগ্রসর মানুষের। এক্ষেত্রে পুরোপুুরি আস্থা এবং বিশ^াস স্থাপন করা যায় এ কারণে যে, সমাজ-রূপান্তর সন্ধানী তৃতীয় সহস্রাব্দ সমিতির পতাকাতলে যারা সমবেত হয়েছেন, তাদের দ্বারা ইতিহাস বিকৃতির মতো ঘটনা ঘটবে না। বিশেষ করে ‘বঙ্গদর্পণ’ সম্পাদনা পরিষদে যারা আছেন, তারা বর্তমান সময়ে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের দ্বারা সুধীমহলে সে-আস্থা অর্জন করেছেন। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থি সরকারের উদার পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে এই সমিতির কর্মকাণ্ডে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীগণ তাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যথাসম্ভব আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন। পাঠাগার-মন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত পাঠাগারে বঙ্গদর্পণ ক্রয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। সমিতির সাংগঠনিক কাঠামো দৃঢ় ভিত্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, জেলা সভাধিপতিগণ ও মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের মেয়রগণ এই সমিতির পৃষ্ঠপোষক। সভাপতি হিসেবে আছেন বিধানসভার মাননীয় অধ্যক্ষ হাসিম আবদুল হালিম। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ সকল মন্ত্রী এই সমিতির সহ-সভাপতি। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন এক সময়ের বামপন্থি আন্দোলনের তুখোড় সংগঠক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায়।

ইতোমধ্যে মিলেনিয়াম কমিটির উদ্যোক্তাগণ বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে যোগযোগ করেছেন। কমিটির পক্ষে অফিস সম্পাদক শ্রীমতী মানসী কীর্তনীয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী মহল এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল ইন্সটিটিউট, এশিয়াটিক সোসাইটি এবং বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে যোগাযোগ করেছেন। বিগত ২৭. ৪. ২০০০ তারিখে শ্রীমতী মানসী কীর্তনীয়ার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় জাতীয় জাদুঘরের তৎকালীন মহাপরিচালক বিশিষ্ট লোকশিল্প গবেষক জনাব শামসুজ্জামান খানের আহ্বানে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আনোয়ার হেসেন, বাংলাদেশ জাতীয় আরকাইভসের পরিচালক ড. শরীফউদ্দিন আহমেদ এবং অত্র নিবন্ধের নিবন্ধকার। উক্ত সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিলেনিয়াম কমিটিকে সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস ব্যক্ত করা হয়। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ৬৫ জন গবেষক ও বিদ্বজ্জনের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়, যারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাণ্ডিত্যের অধিকারী। বঙ্গদর্পণে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত হবে তার সুনির্দিষ্ট তালিকা পেলে সেই অনুযায়ী উপযুক্ত বিদ্বানদের দিয়ে লেখানোর ব্যাপারে জনাব শামসুজ্জামান খান ভূমিকা রাখবেন বলে জানান।

বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং বুদ্ধিজীবী মহলে মিলেনিয়াম কমিটির প্রকল্প সম্পর্কে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান বলেন (০২.১১.২০০০), আপনাদের একটি ঐতিহাসিক, গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের কথা জানতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত এবং উৎসাহ বোধ করছি। আপনারা যে-কাজটি করছেন তা বাস্তবিকই জরুরি এবং উপকারী। বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী জানান (১৮.১০.২০০০), বাংলা ও বাঙালির সহস্রাব্দ সন্ধান পরিকল্পনাটি চমৎকার। এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে যে কোনওভাবে সাহায্য করতে পারলে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হব। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক এবং দৈনিক ইত্তেফাক-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রাহাত খান জানান (১৭.১০.২০০০), বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, এই দুই দেশে বাঙালির অধিষ্ঠান। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির সবধরনের অর্জনেরই স্থান পাওয়া উচিত। যেমন, বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের সাহিত্য, জীবনধারা, সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি থাকা উচিত আলোচ্য গ্রন্থে। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাঙালি ছেলেমেয়েরা ইতিহাসের এই বর্ণনা থেকে অনুপ্রাণিত হবে। চিরায়ত বাঙালি সমাজে আমি বিশ্বাসী। বাংলা ও বাঙালির সহস্রাব্দ সন্ধান-এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সাফল্য চাই। কবি নির্মলেন্দু গুণ জানান (১৭.১০.২০০০), থার্ড মিলেনিয়াম কমিটি ফর সোশ্যাল ট্রানজিশন খুবই সময়োচিত এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগ। অভিনন্দনযোগ্য। আমি মনে করছি– এই উদ্যোগের সঙ্গে বাংলাদেশকে যত বেশি সম্ভব যুক্ত করা প্রয়োজন। সরকারি, বেসরকারি– উভয় পর্যায়ে। জেনে খুশি হচ্ছি যে, এই মহৎ কর্মের পরিকল্পকরা বাংলাদেশকে গভীরভাবে বিবেচনায় রেখেই অগ্রসর হবেন। কবি মোহাম্মদ রফিক জানান (২৫.১০.২০০০), বঙ্গদর্পণ দেখলাম। দেখেছি মাত্র, পড়া হয়ে ওঠেনি। তবে, যেটুকু বোঝা গেল উৎসাহিত হওয়ার মতো খোরাক রয়েছে এখানে। দুই বাংলার দুই মুখ একই আরশিতে প্রতিফলিত হতে দেখা যাবে, সত্যিই অচিন্তনীয়। নিজেকে খুঁজতে পারবে আগামীকালের লোকেরা, যথার্থ আনন্দ সেখানেই।’ কবি মহাদেব সাহা জানান (১৭.১০.২০০০), বাংলা ও বাঙালির সহস্রাব্দ সন্ধানের এই প্রয়াস সকল বাঙালির জন্যই আনন্দের সংবাদ। বাঙালির যা কিছু গৌরবের তার পরিচয় উদ্ঘাটিত হলে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ ও সম্পূর্ণ হবে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য আমাদের পরম গৌরবের বস্তু। বাংলাদেশের বাহান্নর ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে গৌরবময় ইতিহাস রচিত হয়েছে, তা সমগ্র বাঙালিরই মহৎ অর্জন ও শ্রেষ্ঠ অহংকার। বাংলা ও বাঙালির সহস্রাব্দ সন্ধানের এই বিশাল উদ্যোগ সার্থক হোক।

একবিংশ শতাব্দীর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, থার্ড মিলেনিয়াম কমিটির এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। বঙ্গদর্পণ নামক কোষগ্রন্থের মধ্যে ফুটে উঠুক বাঙালির আত্মপরিচয়ের দলিল, যা এক অর্থে বাঙালির আত্মদর্পণ হয়ে উঠবে। বাঙালি জাতিগোষ্ঠী উদ্ভবকালের এক হাজার বছরের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে তারই সুলুকসন্ধান করা হচ্ছে এই একবিংশ শতাব্দীতে।

(“আমাদের কালের গোঁ ও অন্যান্য” বই থেকে)

শেয়ার করুন:

আরো...

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো...

‘লোক’-এর রজতজয়ন্তী আয়োজন

বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিহাসে একটি বিস্ময় জাগানিয়া লিটলম্যাগের নাম ‘লোক’। কবিতা যার প্রাণ। চিন্তাচর্চা ও গবেষণা যার অনুধ্যান। জনমানসের মর্মমূল ছুঁয়ে

Read More
Scroll to Top